ছত্রাকজনিত চর্মরোগ

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা, কিছু ধরণের ছত্রাকের কারণে ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণ হয়। বেশিরভাগ সংক্রমণেরই কার্যকরী চিকিৎসা আছে।

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ কি

ত্বকে ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হয়। কেরাটিন ( Keratin) নামক এক ধরণের আমিষ আমাদের ত্বক, চুল এবং নখের গঠনে সহায়তা করে। ছত্রাক এই কেরাটিন ধ্বংস করে ত্বকের ক্ষতি করে।

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ কিভাবে ছড়ায়

  • দাদ বা Ringworm জাতীয় সংক্রমণ মানুষের মাধ্যমে ছড়ায়
  • ব্যবহৃত বিছানার ছাদর, তোয়ালে, চিরুনী এছাড়া অন্যান্য ব্যক্তিগত সামগ্রী অন্য কেউ ব্যবহার করলে
  • ব্যায়মগার এবং সুইমিং পুলের মত স্থান থেকে এথলেটস ফুট (athlete’s foot) ছত্রাক সংক্রমণ ছড়ায়

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হয়েছে কি করে বুঝবেন

শরীরের কোন অংশে কি ধরণের ছত্রাক সংক্রমণ করেছে তার উপর নির্ভর করে এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলো। ছত্রাকজনিত চর্মরোগ কয়েক ধরণের হয়ে থাকে। যে ধরণের চর্মরোগগুলো বেশি দেখা যায় তা হলো :

  • ডারমাটোফাইট ইনফেকশন (Dermatophyte infections) : এক্ষেত্রে সাধারণত ত্বক, নখ এবং চুল আক্রান্ত হয়। এই ধরণের সংক্রমণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ধরণ হলো :
  •  এথলেটস ফুট (Athlete’s foot (Tinea pedis and tinea manuam)) : প্রতি ১০০ জনে ২৫ জন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির এই ধরণের চর্মরোগ হয়। ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়ার মিলিত সংক্রমণের ফলে ত্বক শুষ্ক, লালচে, খসখসে হয় এবং খোসপাঁচড়ার মত চুলকায়। মাঝে মাঝে ত্বকে ফুসকুড়িও দেখা যায়। হাতের তালুর ভাঁজে, আঙ্গুলের পাশে এবং পায়ের আঙ্গুলের মাঝে এই সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত স্থান থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে যেমন সুইমিং পুলে সাঁতার কাটার মাধ্যমে এই রোগ হতে পারে।
  •  (নখের সংক্রমণ) Nail Infections: নখের ছত্রাকজনিত চর্মরোগকে Onychomycosis বলে। এর মধ্যে সাধারণত Tinea Unguium রোগটিই বেশি হতে দেখা যায়। এতে নখ ভঙ্গুর, পুরু এবং নষ্ট হয়ে যায়। পায়ের নখ এবং হাতের নখ উভয়ই এতে আক্রান্ত হতে পারে।

  •  শরীরে দাদ (Ringworm on the body (Tnea Corporis)) : শরীরের যে অংশগুলো অনাবৃত বা উন্মুক্ত থাকে যেমন : পেট এবং হাত-পা সেই অংশগুলো ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে লালচে হয়ে যায় এবং রিং এর মতে গোলদাগ পড়ে। রিং এর কিনারগুলো অনেকটা আঁশের মত হয়ে যায় এবং মাঝের অংশটুকু পরিষ্কার থাকে। এগুলো শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে। গৃহপালিত পশু থেকে সাধারণত এই রোগ ছড়ায়।

  • মাথার ত্বকে দাদ (Ringworm of the Scalp (Tnea Capitis)) : সাধারণত অল্পবয়সী ছেলে-মেয়েদের বিশেষ করে যারা শহরাঞ্চলে থাকে তাদের এই সংক্রমণ হয়। এর ফলে চুল পড়ে যায় এবং আক্রান্ত স্থানে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এই সংক্রমণের কোন লক্ষণ বুঝা যায় না এবং এই সংক্রমণ একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে যেতে পারে।
  • ছত্রাক সংক্রমণ (Yeast Infections) : এই ধরণের ছত্রাকজনিত চর্মরোগগুলো হলো:
  • ইন্টারট্রিগো (Intertrigo)  : ক্যানডিডা আ্যালবিকানস (Candida albicans) নামক ছত্রাকের সংক্রমণের মাধ্যমে এই রোগ হয়। এটি ত্বকে এবং পরিপাকতন্ত্রে বাস করে। ত্বকের সঙ্গে ত্বকের স্পর্শ লাগে এমন অংশে যেমন-বগলে, কুঁচকিতে, শরীরের মেদ/ভুড়িতে, স্তনের নিচে যেখানে উষ্ণ এবং স্যাঁতস্যাঁতে বা ভিজা থাকে সেসব অংশে এর সংক্রমণ হয়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত স্থানে ফোড়া হয়, চুলকায়, দাগ পড়ে এবং আক্রান্ত স্থানে হলদেটে সাদা রঙের দাগ পড়ে (White-Yellow curd)।
  • ছৌদ বা ছুলি (Pityriasis Versicolor) : এই সংক্রমণের কারণে  ফর্সা এবং ফ্যাকাশে ত্বকে গাঢ় দাগ এবং কালো ত্বকে হালকা দাগ পড়ে। এই সংক্রমণ  টিনিয়া ভার্সিকোলর (Tinea versicolor) নামেও পরিচিত।

  • থ্রাশ (Thrush (Candida albicans)) : ক্যানডিডা আ্যালবিকানস (Candida albicans) নামক ছত্রাক আমাদের আশেপাশেই থাকে কিন্তু খুব কমই সমস্যা ঘটায়। তবে খুব বেশি অসুস্থ থাকলে, ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র নিয়ন্ত্রণে না থাকলে, এ্যান্টিবায়োটিক সেবন করলে এই ছত্রাকগুলো দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে এবং সংক্রমণ ঘটায়। এর ফলে মুখ, জিহবা, যোনিপথ এবং ত্বকের যেসব অংশে ভাঁজ পড়ে সেসব অংশ সংক্রমিত হয়। অনেক সময় পুরুষদের যৌনাঙ্গে লালচে ফুসকুড়ি হয়। এছাড়া ছোট বাচ্চাদের মুখে এবং ন্যাপি এরিয়ায় (Nappy area-যেখানে  মল শুষে নেয়ার জন্য শিশুর পাছা ও দুই পায়ের মাঝখানে তোয়ালে জড়িয়ে রাখা হয় সেখানে) thrush হতে দেখা যায়।

কখন ডাক্তার দেখাবেন

ছত্রাকজনিত চর্মরোগের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্র ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

  • শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
  • ত্বক, নখ এবং চুলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী রোগের ধরণ, মাত্রা এবং রুগীর বয়স অনুসারে চিকিৎসা করাতে হবে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে-

  • আক্রান্ত স্থানে ছত্রাক প্রতিরোধক (Antifungal) ক্রিম, লোশন এবং পাউডার লাগানো
  • ছত্রাক নাশক ঔষধ সেবন

কিভাবে ছত্রাকজনিত চর্মরোগ প্রতিরোধ করা যায়

  • গোসলের পর ভালোমত শরীর মুছতে হবে
  • পোশাক এবং অর্ন্তবাস যথাসম্ভব ঢিলেঢালা পড়তে হবে
  • সুতির মোজা এবং অর্ন্তবাস ব্যবহার করতে হবে
  • কারো ব্যবহৃত তোয়ালে, চিরুনী ব্যবহার করা ঠিক না
  • বিছানার তোষক, চাদর ও কাপড় কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে
  • মাথার ত্বকে দাদ (Scalp Ringworm) এ আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত বালিশ, টুপি, চিরুনী, কাঁচি ফেলে দিতে হবে বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে
  • পা শুকনা রাখতে হবে
  • ডায়াবেটিস যতটা সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হওয়ার কারণগুলো কি কি ?

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হওয়ার কারণগুলো হলো :

  • ত্বক স্যাঁতস্যাঁতে ও ভেজা থাকা
  • ঘেমে যাওয়ার পর অথবা গোসলের পর ত্বক ভালোমত না শুকালে
  • আঁট সাঁট পোশাক পরিধান করলে। কারণ এতে ঘাম শুকানোর সুযোগ পায় না
  • কেটে যাওয়া বা আঁচড় লাগার কারণে ত্বকের ক্ষতি হলে

কাদের ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে ?

যাদের ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তারা হলেন :

  • সাম্প্রতিককালে যারা এ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স সম্পন্ন করেছেন
  • যারা স্টেরয়েড গ্রহণ করছেন
  • যাদের ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ আছে
  • অতিরিক্ত ওজন যাদের
  • যাদের পূর্বে ছত্রাকজনিত সংক্রমণ হয়েছে
  • এইডস অথবা ক্যান্সারের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের দুর্বল হয়ে গেছে।

ছত্রাকজনিত চর্মরোগ হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে?

ছত্রাকজনিত চর্মরোগের ফলে ত্বকের উপরিভাগের থেকে শরীরের অভ্যন্তরে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। ছত্রাকজনিত চর্মরোগ তাদেরই বেশী হয়ে থাকে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।