ফরমালিন

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

ফরমালিন কি?

ফর্মালিন (-CHO-)n হল ফর্মালডিহাইডের (CH2O) পলিমার। ফর্মালডিহাইড দেখতে সাদা পাউডারের মত। জলে সহজেই দ্রবনীয়। শতকরা ৩০-৪০ ভাগ ফর্মালিনের জলীয় দ্রবনকে ফর্মালিন হিসাবে ধরা হয়। ফর্মালিন সাধারনত টেক্সটাইল, প্লাষ্টিক, পেপার, রং, কনস্ট্রাকশন ও মৃতদেহ সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। ফরমালিনে ফরমালডিহাইড ছাড়াও মিথানল থাকে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। লিভার বা যকৃতে মিথানল এনজাইমের উপস্থিতিতে প্রথমে ফরমালডিহাইড এবং পরে ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়। দুটোই শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

ফরমালিনের ক্ষতিকর দিক:

  • ফরমালডিহাইড চোখের রেটিনাকে আক্রান্ত করে রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। ফলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • তাৎক্ষণিকভাবে ফরমালিন, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, কারবাইডসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারের কারণে পেটের পীড়া, হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, বদহজম, ডায়রিয়া, আলসার, চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে।
  • ধীরে ধীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ লিভার, কিডনি, হার্ট, ব্রেন সব কিছুুকে ধ্বংস করে দেয়। লিভার ও কিডনি অকেজো হয়ে যায়। হার্টকে দুর্বল করে দেয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়।
  • ফরমালিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যান্সারও হতে পারে। এতে মৃত্যু অনিবার্য।
  • মানবদেহে ফরমালিন ফরমালডিহাইড ফরমিক এসিডে রূপান্তরিত হয়ে রক্তের এসিডিটি বাড়ায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে।
  • ফরমালিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল সামগ্রী সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে। ফরমালিনযুক্ত দুধ, মাছ, ফলমূল এবং বিষাক্ত খাবার খেয়ে দিন দিন শিশুদের শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট, বিকলাঙ্গতা, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা দিন দিন কমছে।
  • গর্ভবতী মেয়েদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। সন্তান প্রসবের সময় জটিলতা, বাচ্চার জন্মগত দোষত্রুটি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে, প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে।
  • এ ধরনের খাদ্য খেয়ে অনেকে আগের তুলনায় এখন কিডনি, লিভারের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগের সমস্যায় ভুগছেন। দেখা যাচ্ছে, কয়েক দিন পরপর একই রোগী ডায়রিয়ায় ভুগছেন, পেটের পীড়া ভালো হচ্ছে না, চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

মাছ, মাংস, ফলমূল, শাক সবজি থেকে ফরমালিন দূর করার কার্যকরী পদ্ধতি

  • শাক-সবজি রান্না করার পূর্বে লবন যুক্ত পানিতে ১০ মিনিট ডুবিয়ে রেখে তার উপর রান্না করুন। অথবা এক চা চামচ করেনা ভিনেগার, লেবুর রস ও বেকিং সোডা দুইশ মিলিলিটার পানিতে মিশিয়ে ধুয়ে ফেলুন সবজিগুলো। ফরমালিন সহ সমস্ত কেমিক্যাল দূর হয়ে যাবে ।
  • যেসব ফলে ফরমালিন মেশানো আছে বলে সন্দেব করবেন সেই ফলগুলোকে পানিতে ডুবিয়ে রাখুন পুরো ১ ঘণ্টা। ফরমালিন মুক্ত হয়ে যাবে। ফরমালিন মেশানো আছে কিনা সেটা পরীক্ষা করার যন্ত্র এখন বাজারেই কিনতে পারবেন অনেক সুলভ মুল্যে ।
  • মাছ থেকে ফরমালিন দূর করার জন্য সিঙ্কে রেখে পানি ছেড়ে দিয়ে রাখুন ১ ঘণ্টা। অথবা লবন পানিতে ডুবিয়ে রাখতে পারেন ঘণ্টা খানেক। তাতে মুক্ত ববে ৯০ শতাংশ ফরমালিন । ভিনেগার ফরমালিন দূর করতে অতান্ত কার্যকরি ভূমিকা পালন করেনা। ৯০শতাংশ ভিনেগার এর সাথে ১০ শতাংশ পানি যোগ করেনা তাতে মাছ ডুবিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। ১০০% ফরমালিন মুক্ত করতে পারবেন ।