চোখ ও চোখের দৃষ্টি ভাল রাখার উপায়

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

  • সুষম খাবারঃ
    চোখ ও চোখের দৃষ্টি ভাল রাখতে নিয়মিত কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, চর্বি, খনিজ লবন, পানি ও ভিটামিন জাতীয় খাবার প্রয়োজনীয় পরিমানে গ্রহন করতে হবে।
    ভিটামিনের মধ্যে ভিটামিন “এ”, ভিটামিন “ই”, ভিটামিন “সি”, এবং জিংক দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শাকসবজী, ফলমূল, ছোট মলাঢেলা মাছ ইত্যাদি বেশী বেশী খেতে হবে। শিশুদের ৬ মাস বয়স থেকে বুকের দুধের পাশাপাশী শাকসবজী, ফলমূল অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। খাঁটি দুধ আপনার চোখের জন্য খুবই উপকারী। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধপান আপনার চোখের দৃষ্টিকে বহুদিন পর্যন্ত অক্ষত রাখবে। এছাড়া ছানি পড়া বা গ্লুকোমার হাত থেকে রক্ষা করতেও দুধের জুড়ি নেই।

 

  • পানি পান

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন চোখ ভালো রাখতে শরীরে আর্দ্রতা থাকা আবশ্যক। বেশি করে পানি পান করলে শরীর আর্দ্র থাকে।

 

  • আলোর সঠিক ব্যবহারঃ
    চোখ ভাল রাখার জন্য কম আলো বা তীব্র আলোতে লেখাপড়া এবং অন্যান্য কাজ কর্ম করা উচিৎ নয়। দিনের বেলা সূর্যের আলো সরাসরি ব্যবহার করা উচিৎ নয়। রাতে টিউব লাইটের আলো চোখের জন্য আরাম দায়ক। টেবিলল্যাম্পের আলোতে লেখাপড়ার সময় ল্যাম্পটি দেয়ালের দিকে রেখে প্রতিফলিত আলোতে পড়া ভালো। যে আলো কম্পমান নয় সে আলো ব্যবহার করা ভালো।

 

  • টিভি দেখাঃ
    টিভি দেখার সময় টিভির পিছনের দিকের দেয়ালে একটি টিউব লাইট বা শেড যুক্ত ৪০ বা ৬০ পাওয়ারের বাল্ব লাগানো উচিৎ। সাধারণত ১০ ফিট দূর থেকে টিভি দেখা উচিৎ তবে ৬ ফিটের কম দুরত্ব থেকে টিভি দেখা উচিৎ নয়। ঝিরঝির করা, কাঁপাকাঁপা ছবি এবং ভৌতিক ছায়া যুক্ত ছবি না দেখাই ভাল। রঙ্গিন টিভিতে রং (কালার), উজ্জলতা (ব্রাইটনেস) এবং কন্ট্রাস্ট ঠিক রেখে টিভি দেখা উচিৎ। একটানা অনেকক্ষন টিভি দেখা উচিৎ নয়, মাঝে মাঝে দর্শন বিরতি দিয়ে টিভি দেখা চোখের জন্য ভাল।

 

  • কম্পিউটার ব্যবহারঃ

অন্ধকার ঘরে কম্পিউটার চালাবেন না। কম্পিউটার ব্যবহারের সময় মনিটর বরাবর উপরের দিকে টিউব লাইট জ্বালিয়ে রাখুন। মনিটরের উল্টাদিকে মনিটরে প্রতিফলিত হয় এমন কোন বাতি জ্বালিয়ে রাখবেন না। মনিটরের দিকে সরাসরি মুখ করে বসে কম্পিউটার ব্যবহার করুন। একটানা অনেকক্ষন মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়। এক্ষেত্রে কিছুক্ষণ পর পর চোখকে বিশ্রাম দেয়া উচিৎ। বিশ্রামের জন্য কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে আবার কাজ শুরু করুন।

  • ধুলো ময়লা ও দূষিত পরিবেশঃ
    দূষিত পরিবেশ, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক গ্যাস কিংবা কল – কারখানার পরিবেশ চোখের জন্য ক্ষতিকর। এসব ক্ষেত্রে প্রতিদিন কাজের শেষে চোখ ঠান্ডা ও পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

    সূর্যালোকের অতি বেগুনী রশ্মি চোখের শত্রু তাই সূর্যালোক থেকে দূরে থাকা উত্তম । রোদে গেলে সানগ্লাস পড়া উচিৎ। যাদের এমনিতেই চশমা পড়তে হয় তাদের ফটোক্রোমেটিক লেন্স ব্যবহার করা আরাম দায়ক হবে।

 

  • চোখের বিশ্রামঃ

একনাগাড়ে কম্পিউটার বা প্রযুক্তিপণ্য ব্যবহার করবেন না। চোখকে সাময়িক বিশ্রাম দিন। কাজ করতে করতে বা পড়তে পড়তে যখনই আপনার মনে হবে যে চোখ যেন আর চলছেই না, বা ক্লান্ত হয়ে চোখে ব্যথা করছে, তখনই আপনি ৫ থেকে ১০ মিনিট এভাবে হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢেকে কল্পনায় সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যে হারিয়ে যান। প্রতিদিন রাতে আটঘন্টার ঘুম চোখের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্য ধরে রাখতে খুবই জরুরী।

 

  • ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ

ধূমপান আপনার চোখের ছানি, অপটিক নার্ভ ক্ষতি, এবং পেশীর বৃদ্ধির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। ধূমপান ও মদপানের অভ্যাস ছাড়লে চোখ ভালো থাকে।

 

  • চোখে প্রসাধনীর ব্যবহারঃ

প্রসাধনী চোখের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত প্রসাধনী চোখে ব্যবহার করলে এলার্জিক কনজাংটিভাইটিস, ব্লেফারাইটিস, স্টাই ইত্যাদি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

মাথায় খুশকী থাকলে সপ্তাহে ২ বার খুশকী নাশক শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথা খুশকী মুক্ত রাখতে হবে। নইলে মাথার খুশকী থেকে চোখ আক্রান্ত হয়ে চোখে ব্লেফারাইটিস দেখা দিতে পারে।

 

  • বিভিন্ন রোগের সময় চোখের যত্নঃ

বাচ্চাদের হাম, জল বসন্ত, হুপিংকাশি, ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগে বিশেষ যত্ন নেয়া আবশ্যক। এই সব রোগের ঠিকমত চিকিৎসা না করালে চোখের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, যৌন রোগে (এইডস্, সিফিলিস, গনোরিয়া) চোখের ক্ষতি বা অন্ধ হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। তাই যথা সময়ে এসবের চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ।

ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগীদের সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে চোখের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে চোখে ডায়াবেটিস রেটিনোপেথি হতে পারে। এই সব রোগে নিয়মিত ও সঠিক নিয়ে ডায়াবেটিস বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রন রাখতে পারলে চোখ ভাল রাখা সম্ভব।

  • শিশুদের চোখের যত্নঃ

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার গ্রহন গর্ভজাত শিশুর চোখ ভাল রাখা সম্ভব। এছাড়া গর্ভাবস্থায় সংক্রামক রোগ থাকলে গর্ভজাত শিশুর ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে তাই এসময় সংক্রমক রোগ মুক্ত থাকা উচিৎ। জন্মের সাথে সাথেই খেয়াল করুন শিশুর চোখে কোন সমস্যা আছে কিনা থাকলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

  • চোখের ব্যায়ামঃ

শরীরের অন্যান্য অংগের মত চোখের জন্যও রয়েছে ব্যায়াম। চেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা কিন্তু শরীর শিথিল করে বসতে হবে। শরীরের কোন পেশীকে অহেতুক শক্ত করে রাখা যাবে না।

এবার প্রথমে দৃষ্টি সামনে সোজাসুজি রাখুন। ৫ সেকেন্ড পর মুখ সোজা রেখে ডান দিকে ঘোরাবেন চোখের মণি। ৫ সেকেন্ড এভাবেই থাকুন। এবার চোখের মণি ওপরে নিন। ৫ সেকেন্ড পরে চোখের মণি বাম দিকে নিন। একইভাবে ৫ সেকেন্ড পরে চোখের মণি নিচে নিন। নিচের দিকে ধরে রাখুন ৫ সেকেন্ডে।

এরপর পুরো প্রক্রিয়া উল্টে দিন। অর্থাৎ প্রথমে বামে, তারপর ওপরে, তারপর ডানে, তারপর নিচে। এভাবে ৫ বার ডান থেকে বাম দিকে আবার ৫ বার বাম থেকে ডানে করলেই ব্যায়াম সম্পন্ন হবে।

 

চোখে পানির ঝাপটা :  সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হবে চোখে পানির ঝাপটা দেয়া। বেসিনের সামনে গিয়ে চোখ পুরোপুরি বন্ধ করে প্রথমে ২০ বার কুসুম কুসুম গরম পানির ঝাপটা দিন। এরপর ২০ বার ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। আবার রাতে শোয়ার আগে শেষ কাজ হবে চোখে পানির ঝাপটা দেয়া। এবারে উল্টোভাবে। অর্থাৎ প্রথম ২০ বার ঝাপটা দেবেন ঠাণ্ডা পানিতে এবং পরের ২০ বার ঝাপটা দেবেন হালকা গরম পানিতে। এতে চোখে রক্ত চলাচল বাড়বে। চোখ হবে প্রাণবন্ত।

চোখ ঢাকা :  আরাম করে শিথিলভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। সামনের টেবিলে কনুই রেখে হাতের তালু দিয়ে চোখ ঢাকুন। এমনভাবে ঢাকুন, চোখের পাতা যেন হাতের তালু স্পর্শ না করে। এরপর খুব মনোহর প্রাকৃতিক দৃশ্য কল্পনা করুন। আগে দেখে মুগ্ধ হওয়া কোনো প্রাকৃতিক দৃশ্য মনের আয়নায় অবলোকন করুন।

দূরে নিকটে তাকান :  নিকট ও দূরে তাকানোর অভ্যাস বাড়ান। এই তাকানোর অনুশীলন আপনি দুই হাতের দুই আঙ্গুল দিয়েও করতে পারেন। ডান হাতের তর্জনী চোখ থেকে আধ হাত দূরে রাখুন। আর বাঁ হাত যতটা সম্ভব দূরে নিয়ে তর্জনী সোজা করে রাখুন। এবার প্রথমে ডান- অর্থাৎ কাছের হাতের তর্জনীর দিকে দুই চোখ দিয়ে ৫ সেকেন্ড এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকুন। ক্ষণিকের জন্যে চোখের পাতা ফেলুন। এরপর আবার দূরে অবস্থিত বাম হাতের তর্জনীর ডগায় এক দৃষ্টিতে ৫ সেকেন্ড তাকান। ক্ষণিকের জন্যে পলক ফেলুন। আবার কাছের আঙুলের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন। এভাবে ১০ বার একই অনুশীলন করুন।

পলক ফেলুন :  দশ-পনেরো সেকেন্ড পরপর চোখের পাতা মুহূর্তের জন্যে বন্ধ করার অভ্যাস করুন। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে না থেকে মাঝে মাঝে চোখের পাতা পড়তে দিন। এতে চোখ পরিষ্কার ও পিচ্ছিল থাকবে।

 

  • নিয়মিত চেকআপঃ

যদি আগে থেকে কোনো রোগ ধরে ফেলা যায় তাহলেই তা চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক করা সম্ভব। তাই বছরে ২ বার সাধারণ চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে যান। এতে করে যদি চোখে কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তা প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়বে এবং আপনি বড় কোনো ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবেন।

  • চোখে চশমার ব্যবহারঃ

যাদের চোখে চশমা প্রয়োজন তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পাওয়ার পরীক্ষা করে চশমা পড়া উচিৎ। স্বাভাবিক ভাবেই ৪০ বছরের কাছাকাছি বয়স থেকেই পড়াশুনা করতে ও কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা হয়। এসময়ে দূরের বস্তু ভাল দেখলে কাছে দেখার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মত বাইফোকাল চশমা গ্রহন করতে হয়। দূরের দৃষ্টি ভাল না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মত দূরের ও কাছে দেখার জন্য বাইফোকাল চশমা ব্যবহার করা উচিৎ। চোখে অবশ্যই চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা চোখ পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় চশমা পড়া উচিৎ। আবার অনেকে মনে করেন এসময় চশমা ব্যবহার করলে সারাজীবন চশমা ব্যবহার করতে হবে তাই চশমা ব্যবহার করেননা। আসলে এ সময় চশমা ব্যবহার করলেই চোখ ভাল নতুবা পড়াশুনা বা কাচের জিনিস দেখতে চোখে চাপ পড়ে এই চাপ চোখের ক্ষতি করতে থাকে। কন্টাক্ট লেন্স ব্যাবহারে সতর্ক থাকুন।