টাইফয়েড

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

টাইফয়েড একটি সংক্রামক রোগ। শিশু বৃদ্ধ সবারই এই রোগ হতে পারে। বিশেষ ধরণের জীবাণুর মধ্যে এই রোগ ছড়ায়।

টাইফয়েড জ্বর কি

টাইফয়েড জ্বর স্যালমোনেলা জীবাণু দিয়ে হয়ে থাকে। সাধারণত দূষিত খাবার এবং পানির মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলেও এ রোগ হতে পারে। এই রোগের কারণে তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা, পেট ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া হয়।

টাইফয়েড জ্বর হয়েছে কি করে বুঝবেন

টাইফয়েডে আক্রান্ত শিশুরা হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলো সাধারাণত রোগে আক্রান্ত হবার এক থেকে তিন সপ্তাহ পর দেখা দেয়।

সাধারণত: টাইফয়েড জ্বরের প্রাথমিক লক্ষণ গুলো হলো:

  • ১০৩-১০৪ ফারেনহাইট (৩৯.৪ অথবা ৪০ সে.) জ্বর
  • মাথা ব্যথা
  • দুর্বল এবং অবসাদবোধ করা
  • গলা ব্যথা
  • পেট ব্যথা
  • ডায়রিয়া অথব কোষ্ঠকাঠিন্য
  • চামড়ায় লালচে দানা বা র‌্যাশ

এছাড়া ক্রমে অন্যান্য যে লক্ষণ গুলো সাধারণত দেখা দেয় সেগুলো হলো:

  • তীব্র জ্বর
  • মারাত্মক ডায়রিয়া (হলুদ ও পাতলা ডালের মত) অথবা তীব্র কোষ্ঠকাঠিন্য
  • শরীরের ওজন দ্রুত হ্রাস পাওয়া
  • পেট ফোলা/ফাঁপা
  • রোগের মারাত্মক অবস্থায় রুগী বিকারগ্রস্থ হয় ও প্রলাপ (Delirious) বকে

কখন ডাক্তার দেখাবেন

  • টাইফয়েড জ্বর হয়েছে সন্দেহ হলেই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে
  • এছাড়া উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্র ডাক্তারের কাছে যেতে হবে

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

  • রোগের ইতিহাস জানা
  • রক্ত পরীক্ষা
  • প্রস্রাব-পায়খানা ও অস্থিমজ্জা (Bone Marrow) পরীক্ষা

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

  • এ্যান্টিবায়োটিক সেবন
  • পানিশূন্যতা দেখা দিলে শিরার মাধ্যমে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে
  • উচ্চ ক্যালোরি সম্পন্ন সুষম খাবার গ্রহণ

পথ্য

  • পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে হবে
  • স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাবার খেতে হবে

টাইফয়েড জ্বর কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়

  • ভালোভাবে হাত ধোয়া
  • নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান
  • স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার
  • খাবার তৈরি এবং খাবার গ্রহণের পূর্বে এবং পায়খানা ব্যবহারের পর সাবান/ছাই দিয়ে হাত ধোয়া
  • কাঁচা বা অপরিষ্কার শাক-সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা
  • খাবার গরম করে খাওয়া
  • ঘরের জিনিসপত্র নিয়মিত পরিষ্কার করা
  • টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যের জন্য খাবার তৈরি থেকে বিরত থাকা
  • আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদি আলাদা করে রাখা

টাইফয়েড জ্বর কেন হয় ?

সালমোনেলা টাইফি ব্যকটেরিয়া (Salmonella typhi Bacteria) নামক বিশেষ এক ধরণের জীবাণু দ্ধারা সংক্রমণের মাধ্যমে টাইফয়েড হয়।

কাদের টাইফয়েড জ্বর হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে ?

যাদের টাইফয়েড জ্বর হবার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে তারা হলেন-

  • দূষিত পানি পান করলে বা দূষিত খাবার খেলে
  • যে সমস্ত জায়গায় টাইফয়েড জ্বর ব্যাপক আকারে দেখা দেয় সে সমস্ত এলাকায় থাকা ও ভ্রমণ করলে
  • যারা হাসপাতালে সালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করেন (Clinical Microbiologist)
  • টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তি বা সাম্প্রতিক কালে যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের সংস্পর্শে আসা বা তাদের হাতে তৈরী খাবার খেলে
  • এইচআইভি বা এইডসের চিকিৎসার কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয়ে গেছে

টাইফয়েড জ্বর হলে কি ধরণের জটিলতা দেখা দিতে পারে ?

টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে:

  • অন্ত্রে ছিদ্র বা রক্তক্ষরণ
  • হৃৎপিন্ডের মাংসপেশীতে প্রদাহ
  • অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ (Panereatitis)
  • কিডনিতে (Kidney) সংক্রমণ
  • মেরুদন্ডে সংক্রমণ
  • শরীরের ঝিল্লিতে (Membrane) সংক্রমণ ও প্রদাহ এবং মাথায় ও মেরুদন্ডে তরল/রক্ত (Fluid) জমাট বাঁধা
  • বিভিন্ন ধরণের মানসিক সমস্যা যেমন- বিকারগ্রস্থ (Delirium) , দৃষ্টিভ্রম (Hallucination), মস্তিষ্ক বিকৃতি (Paranoid) দেখা দেয়।