মাসিক সংক্রান্ত বিবিধ বিষয়

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

মাসিক বা পিরিয়ড নারীর জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিকভাবেই এই মাসিক বা পিরিয়ড শুরু হয় আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা বন্ধও হয়ে যায়।

মাসিক (menstruation) কি

নারীদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় প্রভাবকারী একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হচ্ছে মাসিক। ডিম্বাশয়, ডিম্বাশয় হতে বহির্গত হবার নালী (Fallopian tube), জরায়ু, এন্ডোমেট্রিয়াম (Endometrium) এবং যোনির সমন্বয়ে তৈরী প্রজনন অঙ্গ তলপেটে অবস্থিত। মাসিক চক্রের সময় শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে হরমোন নিঃসৃত হয়। এই হরমোনে আছে এসট্রোজেন এবং প্রজেসটেরোন যা শরীরকে গর্ভবস্থার জন্য তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত, প্রতি ২৮ দিন পরপর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নি:সৃত হয়, যা জরায়ুর দুই পাশের নালী (Fallopian tube) দিয়ে জরায়ুর মধ্যে প্রবেশ করে। গর্ভধারণ না করলে, অনিষিক্ত ডিম্বাণু এবং জরায়ুর আবরণ (এন্ডোমেট্রিয়াম) একত্রে প্রত্যেক চক্রে শরীর থেকে ঝরে যায়। একেই মাসিক তৈরী হওয়া বা রজ:স্রাব (Menstruation) বলা হয়।

মাসিক কখন শুরু এবং শেষ হয়

  • নারীদের প্রজনন প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরু হয় সাধারণত: ১০-১৬ বছরের মাঝামাঝি বয়সে
  • কোন কোন মেয়েদের ৯ বছর বয়সে, আবার কারো কারো ১৬ বা তার অধিক বয়সে প্রথম মাসিক হয়
  • বেশিরভাগ মেয়েদেরই ১২ বছর বয়সে মাসিক শুরু হয়
  • যখন রজ:নিবৃত্তি বা মেনোপজ হয় তখন মহিলাদের এই মাসিক স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত ৫০ বছর বা তার অধিক বয়সে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।

কি করে বুঝবেন মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা হয়েছে

মাসিক সংক্রান্ত সমস্যা হলে সাধারণত: যে উপসর্গগুলো দেখা দেয় :

বিলম্বিত/দেরিতে মাসিক শুরু হওয়া

  • স্তনের বিকাশ শুরু হবার ৩ বছরের মধ্যেও মাসিক শুরু না হলে
  • ১৩ বছর বয়সেও মাসিক না হলে এবং স্তন বিকাশ ও অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন না  হলে
  • ১৪ বছর বয়সেও মাসিক না হলে এবং নিচের সমস্যাগুলো দেখা দিলে :
  • যোনির অস্বাভাবিকতা
  • থুতনি, মুখমন্ডল, ঠোঁটের উপরের অংশে, বুক, স্তনের বোটার চারপাশে এবং তলপেটে বেশি চুল গজালে
  • ১৫-১৬ বছর বয়সেও মাসিক আরম্ভ না হলে

অনিয়মিত মাসিকের উপসর্গ

  • প্রতি ১ অথবা ২ ঘন্টায় কাপড় বা স্যানিটারি ন্যাপকিন একাধিক বার বদলালে
  • আগে নিয়মিত হলেও এখন লক্ষ্যনীয়ভাবে অনিয়মিত হলে
  • খুব তাড়াতাড়ি যেমন ২১ দিনের মধ্যেই মাসিক হলে অথবা খুব দেরিতে যেমন ৪৫ দিনে একবার মাসিক হলে অথবা খুব বেশি যেমন ৪৫ দিনের মধ্যে হলে
  • ৭ দিনের বেশি মাসিক স্থায়ী হলে

ব্যথাযুক্ত মাসিকের উপসর্গ

একে ডিসমেনোরিয়া (Dysmenorrhea) বলে। এক্ষেত্রে  মাসিকের সময় তলপেট তীব্র ব্যথা হয়।

মাসিকের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়

মাসিকের সময়, মাসিকের আগে অথবা মাসিকের পরে নিচের সম্ভাব্য অবস্থাগুলো দেখা যেতে পারে :

১. মাসিক পূর্ব সিনড্রম (Premenstrual Syndrome) :

এর ফলে মাসিকের পূর্বে মহিলাদের নিম্নলিখিত মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনগুলো দেখা যায় :

  • মাথা ব্যথা
  • মাথা ঝিমঝিম করা
  • খিদে না পাওয়া
  • বমি বমি ভাব
  • স্তন ফুলে যাওয়া
  • অল্পতেই অবসাদ অনুভব করা
  • ঘুমের সমস্যা
  • কোন কোন মহিলার ক্ষেত্রে মেজাজের পরিবর্তন হওয়া ও খিটখিটে হয়ে যাওয়া

২. টক্সিক শক সিনড্রোম (Toxic shock syndrome ):

সাধারণত:এই সমস্যা খুব কম হতে দেখা যায়। মাসিকের সময় রক্ত শুষে নেয়ার জন্য যে তুলা ব্যবহার করা হয় তা থেকে এই সমস্যা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে একটি তুলার প্যাড ব্যবহার করা অথবা তুলার রক্ত বা ক্লোরিন অথবা রেয়ন জাতীয় তুলা থেকে এলার্জি জনিত কারণে এই সমস্যা দেখা যায়।

মাসিকের সময় নিজের যত্ন

  • ক্যালেন্ডার অথবা ডায়েরীতে মাসিক শুরু বা শেষ হবার তারিখ এবং মাসিক পূর্ব সিনড্রম-এর উপসর্গগুলো লিখে রাখতে হবে
  • স্যানিটারি ন্যাপকিন/ প্যাড, কাপড় ব্যবহারের সময় নিচের বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে।
  • সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য প্যাড বা কাপড় পরিবর্তনের আগে ও পরে ভালোমত হাত পরিষ্কার করতে হবে।
  • প্রতি তিন বা চার ঘন্টা পর প্যাড পরিবর্তন করতে হবে
  • প্যাডটি অথবা কাপড়টি ভালো করে মুড়ে আবর্জনার মধ্যে ফেলতে হবে। টয়লেটের মধ্যে ফেললে সুয়ারেজ লাইন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ

মাসিকের সময় সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে যেমন :

  • শর্করা সম্বলিত-শস্য, ডাল, শাকসবজি, দই, আলু খেতে হবে
  • আমিষ জাতীয় খাদ্য যেমন : দুধ, ডিম, বাদাম, মাছ ও মাংস খেতে হবে
  • আয়রণ বা লৌহ জাতীয় খাদ্য যেমন-ডিম, সিম, পালংশাক, আলু, কলা, আপেল, গুড়, খেজুর, কালোজাম ইত্যাদি খেতে খেতে হবে
  • ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন-বাদাম, সয়াবিন, গাঢ় সবুজ শাকসবজি খেতে হবে
  • ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার-দুগ্ধজাত খাবার, দুধ, ডিম, বাদাম (Almond), এবং সয়াবিন খেতে হবে
  • কম লবণযুক্ত খাবার খেতে হবে
  • তাজা ফলের রস পান করতে হবে এবং অতিরিক্ত চা-কফি পান থেকে বিরত থাকতে হবে
  • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে

ত্বকের যত্নে করণীয়

  • ত্বকের মরা কোষ, ঘাম ও ক্ষতিকর জীবাণু থেকে রক্ষার জন্য দিনে অন্তত দুইবার ভালো সাবান দিয়ে মুখ ধুতে হবে

তলপেট ব্যথা হলে করণীয়

  • তলপেটে এবং পিঠে গরম পানির বোতল ধরে রাখা
  • তলপেটে হালকা মেসেজ করলে ব্যথা কমে যাবে
  • হালকা ব্যায়াম করা
  • ডাক্তারের পরামর্শ মতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যথার কারণ নির্ণয় ও সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করা

 মাসিক পূর্ব সিনড্রম কি (Premenstrual syndrome)

সাধারণত ২০ বছরের শেষে এবং ৩০ বছরের শুরুতে মাসিক পূর্ব সিনড্রম  দেখা যায়। কোনো মাসে  মাসিক পূর্ব সিনড্রম এর ফলে ঘটিত শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো খুব বেশী ভাবে দেখা যায় এবং কখনও কম দেখা যায়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

মাসিক পূর্ব সিনড্রম-এর ফলে সাধারণত: নিচের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা যায় :

মানসিক ও আচরণগত উপসর্গ
  • দুশ্চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা
  • বিষন্নতা
  • হঠাৎ কেঁদে ফেলা
  • মেজাজ উঠা-নামা করা এবং ক্রোধান্বিত হওয়া
  • খাবারে রুচির পরিবর্তন হওয়া (Appetite Changes and food cravings)
  • নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের সমস্যা হওয়া
  • সামাজিক কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকা (Social withdrawn)
  • অসচেতনতা
শারীরিক লক্ষণ ও উপসর্গ
  • অস্থিসন্ধি অথবা মাংসপেশীতে ব্যথা
  • মাথা ব্যথা
  • অবসাদ
  • শরীরে রস জমে ওজন বৃদ্ধি পাওয়া
  • পেট ফুলে যাওয়া (Abdominal bloating)
  • স্তনে ব্যথা
  • মুখে ব্রণ বা একনি বেড়ে যাওয়া
  • কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া

কখন ডাক্তার দেখাবেন

উপরোক্ত উপসর্গগুলো মারাত্মক আকারে দেখা দিলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

এক্ষেত্রে তেমন কোন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন নেই। মাসিক পূর্ব সিনড্রম-এর উপসর্গগুলো জানার মাধ্যমেই ডাক্তার রোগ নির্ণয় করতে পারে।

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

সমস্যার ধরণ, মাত্রা এবং রুগীর বয়সের উপর চিকিৎসা নির্ভর করে। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

  • ডাক্তারে পরামর্ম অনুযায়ী বিষন্নতা রোধী (Antidepressants), ব্যথা নাশক (Nonstcroidal anti-inflammatory) ঔধষ সেবন
  • জন্মরিরতি করণ ঔধষ বা পিল সেবন
  • ইনজেকশন গ্রহণ (Medroxy progesterone acetate )

জীবন-যাপন পদ্ধতি

  • বারে বারে অল্প করে খাবার খেতে হবে
  • খাবারে কম লবণ ব্যবহার করতে হবে
  • শর্করা সমৃদ্ধ খাবার যেমন: ফলমূল, শাকসবজি বেশী করে খেতে হবে
  • আয়রন বা লোহা সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে
  • ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। যদি খাবারে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকে তাহলে ক্যালসিয়াম ঔষধ সেবন করতে হবে
  • প্রতিদিন মাল্টিভিটামিন ঔষধ খেতে হবে
  • চা, কফি এবং মাদকদ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে
  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার ইত্যাদি

মানসিক চাপমুক্ত থাকার জন্য করণীয়

  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে
  • পেশী শিথিল করা এবং গভীর শ্বাস গ্রহণের  ব্যায়াম করতে হবে
  • যোগব্যায়াম বা ম্যাসাজ করাতে হবে
  • উপসর্গগুলির ধরণ ও সময় লিখে রাখতে হবে যাতে পরবর্তীতে এটি নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া যায়

মেনোরেজিয়া (Menorrhagia) কি

মেনোরেজিয়ার ক্ষেত্রে মাসিকের সময় প্রচুর রক্তপাত হয় এবং পেটে ব্যথা হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

মেনোরেজিয়া হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়:

  • মাসিকের প্রথম দিন গুলোতে প্রতি ঘন্টায় কাপড় বদল করতে হয়
  • রক্তপাত শোষণের জন্য দুইটি স্যানিটারি প্যাড বা কাপড় ব্যবহার করতে হয়
  • রাতের বেলা স্যানিটারি প্যাড বা কাপড় পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে
  • মাসিকের সময় ৭ দিনের অধিক স্থায়ী হলে
  • মাসিকের রক্তের সাথে রক্তের বড় চাকা গেলে
  • অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণে দৈনন্দিন জীবন যাত্রায় ব্যাঘাত ঘটা
  • ক্লান্ত, অবসাদ অনুভব অথবা শ্বাসকষ্ট হয়

কখন ডাক্তার দেখাবেন

উপরোক্ত লক্ষণ গুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

  • রোগের ইতিহাস এবং মাসিক চক্র জানা
  • রক্তের পরীক্ষা
  • আল্ট্রাসাউন্ড স্ক্যান (Ultrasound scan)
  • এন্ডোমিটরিয়াল বায়োপসি (Endometrial biopsy)
  • পেপ টেস্ট

এছাড়া চিকিৎসক প্রয়োজনবোধে অন্যান্য পরীক্ষা যেমন ডি এন্ড সি করতে পারেন।

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

মেনোরেজিয়ার চিকিৎসা কতগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে যেমন:

  • স্বাস্থ্য এবং রোগের ইতিহাস
  • অবস্থার কারণ এবং ধরণ
  • ভবিষ্যৎ সন্তান গ্রহণের পরিকল্পনা
  • জীবন যাপন পদ্ধতির উপর প্রতিক্রিয়া
  • রুগীর ব্যক্তিগত মতামত

উপরোক্ত বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে মেনোরেজিয়ার যেসব চিকিৎসা রয়েছে সেগুলো হলো:

  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আয়রণ ঔষধ, ননস্টেরয়ডাল প্রদাহ প্রতিরোধক (Nonsteroidal anti-inflammatory) ঔষধ সেবন
  • জন্ম নিয়ন্ত্রণ ঔষধ সেবন
  • হরমোন ট্যাবলেট সেবন
  • জরায়ুর ভেতরে হরমোন নি:সরক ডিভাইস (IUD) রাখা
  • ঔষধে না সারলে শল্য চিকিৎসা বা অপারেশন

জীবন-যাপন পদ্ধতি

  • অতিরিক্ত রক্তপাত হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম করতে হবে
  • দিনে কতবার প্যাড বা কাপড় পরিবর্তন করতে হয় তার লিখে রাখতে হবে
  • এসপিরিন  ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে

ডিজমেনোরিয়া (Dysmenorrhea) কি

মাসিকের সময় তলপেটে অনেকেরই ব্যথা করে। একে ডিজমেনোরিয়া বলে। অধিকাংশ মহিলাদের মাসিকের পূর্বে এবং মাসিক চলাকালীন সময়ে ব্যথা করে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই সমস্যা এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis) অথবা জরায়ুরে টিউমারের (Uterine fibroids) কারণে হয়। ছোট বেলায় হলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা লোপ পায় এবং বাচ্চা হবার পর এটি চলে যায়। আবার কারো কারো পরিণত বয়সেও ব্যথা শুরু হয়।

লক্ষণ ও উপসর্গ

ডিসমেনোরিয়া হলে সাধারণত: যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ গুলো দেখা দেয়:

  • তলপেটে হালকা ব্যথা, ধড়ফড়ানি এবং মাংসপেশীতে যন্ত্রণা
  • পিঠের নিচের দিকে এবং উরুতে ব্যথা

অন্যান্য উপসর্গ

  • বমি বমি ভাব এবং বমি করা
  • পাতলা পায়খানা
  • ঘাম হওয়া
  • মাথা ঝিমঝিম করা

কখন ডাক্তার দেখাবেন

মাসিকের সময় উপরোক্ত লক্ষণ ও উপসর্গগুলো দেখা দেয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

কি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

  • আল্ট্রাসাউন্ড (Ultrasound)
  • কম্পিউটারাইজড টমোগ্রাফী (Computerized tomography)
  • ম্যাগনেটিক রিজোন্যান্স ইমেজিং (Magnetic resonance imaging )
  • হিস্টেরোস্কোপি (Hysteroscopy)
  • ল্যাপেরোস্কোপি (Laparoscopy)

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

  • ননস্টেরেয়ডাল প্রদাহ প্রতিরোধক (Nonsteroidal anti-inflammatory) ঔষধ সেবন
  • জন্মনিয়ন্ত্রক হরমোন ঔষধ সেবন
  • এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis) অথবা টিউমার (Fibroids) এর মত সমস্যা হলে শল্য চিকিৎসা করা

মাসিক কতদিন স্থায়ী হয় এবং কি পরিমাণ রক্ত ক্ষয় হয়?

উত্তর. মাসিক চক্র কমপক্ষে ২১ দিন এবং বেশী হলে ৪৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয়। প্রথম মাসিক হবার ২-৩ বছর পর্যন্ত তা অনিয়মিত হতে পারে। মাসিক সাধারণত: ২-৭ দিন স্থায়ী হয় এবং হাল্কা, মাঝারি থেকে খুব বেশী পরিমাণে রক্ত নির্গত হয়। সাধারণত: ২০ -৬০ মিলিমিটার রক্ত ক্ষয় হয়। এটি একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয় এবং একই মহিলার ক্ষেত্রে এটি ভিন্নরকম হতে পারে।

অনিয়মিত মাসিক হবার কারণ গুলো কি কি?

সাধারণত: গর্ভবতী মহিলাদের মাসিক হয় না । এছাড়া যেসব মা বাচ্চাদের বুকের দুধ পান করান তাদের সাধারণত: বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ না করা পর্যন্ত  মাসিক হয় না। এছাড়া অনিয়মিত মাসিক হবার কারণ গুলো হলো:

  • জন্ম থেকেই কোন কোন মহিলার যোনিতে ত্রুটি থাকে । এর ফলে মাসিক অনিয়মিত হয়।
  • হরমোণের পরিবর্তনের ফলে ডিম্বস্ফোটনে (Ovulation) সমস্যা হতে পারে । এটি প্রধানত: দুটি কারনে হয় যথা:

১. এন্ডোক্রাইন কন্ডিশন (Endocrine Conditions):

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মেলিটাস, কুশিং সিনড্রোম (Cushing’s Syndrome), থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সাধারণত ডিম্বস্ফোটনে সমস্যা থাকে ও মাসিক অনিয়মিত হয়।

২. পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (Polycystic Ovarian Syndrome):

এই সমস্যার কারণে ডিম্বাশয় স্ত্রী হরমোণ থেকে পুং হরমোণ বেশী তৈরী করে ও মাসিক অনিয়মিত হয়।

৩. মূত্রগ্রন্থি, পিটুইটারী গ্রন্থি এবং ডিম্বাশয়ে টিউমার হলে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

অন্যান্য কারণ

  • খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম এবং ওজন খুব বেশী হলে অথবা ওজন অনেক বেশী কমে গেলে
  • খুব বেশী কাজ বা ব্যায়াম করলে
  • পেটে অথবা শ্রোণীতে কোন অপারেশন যেমন: জরায়ু ফেলে দেয়ার অপারেশন করে থাকলে
  • মানসিক চাপ অথবা বিষন্নতা

মাসিক পূর্ব সিনড্রোম হবার কারণ গুলো কি কি?

মাসিক পূর্ব সিনড্রোম হবার সঠিক কারণ সেভাবে না জানা গেলেও নিচের কারণ গুলো এর জন্য দায়ী বলে ধরে নেয়া হয়:

  • হরমোণের চক্রাকারে পরিবর্তন
  • মস্তিষ্কের সেরোটোনিন (Serotonin) নামক রাসায়নিক বস্তু অপর্যাপ্ত থাকলে বা কম বেশী হলে
  • বিষন্নতা
  • মানসিক চাপ
  • খাবার-দাবারে অনীহা যেমন: ভিটামিন ও খনিজ জাতীয় খাবার কম খেলে, লবণাক্ত খাবারে বেশী খেলে এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবার বেশী খেলে ও মাদক গ্রহণ করলে

মেনোরেজিয়া হওয়ার কারণ গুলো কি কি?

মেনোরেজিয়া হওয়ার কারণ গুলো হলো:

  • হরমোণের অসামঞ্জস্যতা বা ভারসাম্যহীণতা
  • ভ্রুণকোষের অকার্যকারিতা
  • জরায়ুর টিউমার হলে
  • জরায়ুতে পলিপ হলে
  • এডেনোমায়োসিস (Adenomyosis)
  • জরায়ুতে কপারটি (IUD) ধারণ করলে
  • গর্ভকালীন জটিলতা
  • জরায়ু, ডিম্বাশয় অথবা জরায়ু মুখে ক্যান্সার হলে
  • বংশগতভাবে রক্তের রোগের ইতিহাস থাকলে
  • কিছু কিছু ঔষধ যেমন: এসপিরিন (Aspirin) সেবন করলে
  • এছাড়া অন্যান্য সমস্যা থাকলে যেমন- শ্রোণীর প্রদাহ, থাইরয়েডের সমস্যা, Endometriosis এবং যকৃত ও কিডনির অসুখ হলে

কাদের মেনোরেজিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে?

যাদের মেনোরেজিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে তারা হলেন:

  • কিশোরী মেয়েরা যাদের সবে মাত্র মাসিক শুরু হয়েছে
  • ৪০-৫০ বছর বয়সী মহিলারা যাদের মেনোপজ / মাসিক বন্ধ হওয়ার সময় হয়েছে

মেনোরেজিয়ার কারণে কি কি জটিলতা দেখা দিতে পারে?

মেনোরেজিয়ার কারণে নিচের জটিলতা দেখা দিতে পারে:

  • আয়রণের অভাবজনিত রক্তশূণ্যতা
  • তলপেটে মারাত্মক ব্যথা

ডিজমেনোরিয়ার কারণগুলো কি কি?

ডিজমেনোরিয়া হলে কোন কারণ ছাড়াই মাসিকের সময় ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও ডিজমেনোরিয়ার কারণগুলো হলো:

  • এন্ডোমেট্রিওসিস (Endometriosis )
  • জরায়ুর টিউমার
  • এডেনোমায়োসিস (Adenomyosis)
  • শ্রোণীর প্রদাহজনিত রোগ (PDI)
  • জরায়ু মুখ সংকুচিত হওয়া (Cervical stenonis)

কাদের ডিজমেনোরিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে?

যাদের ডিজমেনোরিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশী রয়েছে তারা হলেন:

  • ২০ বছরের কম বয়সীদের
  • ১১ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সীদের
  • মাসিকের সময় যাদের অতিরিক্ত রক্তপাত হয়
  • যারা কোন সন্তানের জন্ম দেননি