পরিবার পরিকল্পনার আধুনিক পদ্ধতিসমূহ

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

পরিবার পরিকল্পনার আধুনিক পদ্ধতিসমূহ

পরিকল্পিত ও সুস্থ-সুন্দর পরিবার গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি দম্পতিকেই পরিবার পরিকল্পনার পদ্ধতি সম্পর্কে সকল তথ্য জানতে হবে এবং ভেবে-চিন্তে উপযুক্ত পদ্ধতিটি বেছে নিতে হবে।

অস্থায়ী পদ্ধতি (স্বল্পমেয়াদী): ১. খাবার বড়ি/Oral Pill (মহিলাদের জন্য)
২. কনডম/Condom (পুরুষদের জন্য)
৩. ইনজেকটেবলস্/Injectables (৩ মাস মেয়াদী মহিলাদের জন্য)
অস্থায়ী পদ্ধতি (দীর্ঘমেয়াদী): ১. আই ইউ ডি/IUD (১০ বছর মেয়াদী মহিলাদের জন্য)
২. ইমপ্লান্ট/Implant (৩/৫ বছর মেয়াদী মহিলাদের জন্য)
স্থায়ী পদ্ধতিঃ ১. ভ্যাসেকটমি/এনএসভি (NSV) -ছুরিবিহীন ভ্যাসেকটমী (পুরুষদের জন্য)
২. টিউবেকটমি (Tubectomy) /লাইগেশন (মহিলাদের জন্য )

খাবার বড়ি (Oral Pill)

গর্ভনিরোধের মিশ্র খাবার বড়ি সাধারণ মানুষের কাছে ‘খাবার বড়ি’ হিসেবেই পরিচিত। খাবার বড়ি গর্ভনিরোধের অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকর পদ্ধতি। বাংলাদেশে খাবার বড়িই হলো সর্বাধিক ব্যবহৃত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। বর্তমানে প্রচলিত খাবার বড়ির উপাদান হলো এষ্ট্রোজেন ও প্রজেষ্টেরন হরমোন। মূলতঃ এষ্ট্রোজেন হরমোন এর পরিমাণের উপর ভিত্তি করে খাবার বড়ির প্রকার নির্ণয় করা হয়। এ জন্য খাবার বড়িকে মিশ্র খাবার বড়ি নামে অভিহিত করা হয়।

কার্যকারিতাঃ

মিশ্র বড়ি সঠিকভাবে গ্রহণ করলে প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ কার্যকরী।

খাবার বড়ির সুবিধাঃ

  • সকল বয়সী মহিলা জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসাবে খাবার বড়ি ব্যবহার করতে পারেন।
  • এটি একটি অস্থায়ী পদ্ধতি, যে কোন সময় বড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্য পদ্ধতি গ্রহণ করা যায় অথবা গর্ভধারণ করা যায়।
  • সঠিকভাবে বড়ি খেলে এটি অত্যন্ত কার্যকারী (শতকরা ৯৭-৯৯.৯ ভাগ)
  • মাসিক চক্রকে নিয়মিত করে।

অসুবিধাসমূহঃ

  • প্রতিদিন খেতে হয়
  • মাসিক স্রাব বন্ধ থাকতে পারে (Post Pill amenorrhaea)।
  • যোনিপথের পিচ্ছিলতা কমে যেতে পারে
  • বুকের দুধ কমে যেতে পারে
  • বিমর্ষতা দেখা দিতে পারে
  • জন্মনিয়ন্ত্রণের খাবার বড়ি ব্যবহারের প্রথম দিকে (বিশেষত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে) ছোট খাট পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন-
  • স্তন স্পর্শ কালে ব্যথার অনুভুতি (Tenderness), বেদনা
  • দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব
  • বমি বমি ভাব
  • মাথা ধরা
  • মুখে ব্রণ
  • ওজন বৃদ্ধি
  • যে সমস্ত মহিলার মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (Myocardial Infarction MI)- এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বিদ্যমান, খাবার বড়ি তাদের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেয়।
  • যে সমস্ত মহিলার স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি আছে (যেমন ধুমপান/তামাক পাতা গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপ) খাবার বড়ি ব্যবহার তাদের ষ্ট্রোকের ঝুঁকি আরো বাড়ায়।
  • শিরার রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার (Venous Thromboembolism) সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই অতীতে বা বর্তমানে যাদের এই সমস্যা হয়েছে তারা এস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ মিশ্র বড়ি খেতে পারবেন না।

খাবার বড়ি যাদের জন্য উপযুক্ত

যারা জন্মনিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী একটি অস্থায়ী পদ্ধতি নিতে চান।

  • যারা জন্মনিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী একটি অস্থায়ী পদ্ধতি নিতে চান।
  • মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাবের দরুন যারা রক্তস্বল্পতায় ভোগেন।
  • মাসিক চক্র যাদের অনিয়মিত
  • যে সব মা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন তারা বাচ্চার বয়স ৬ মাস হবার পর জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি হিসাবে মিশ্র খাবার বড়ি খেতে পারেন।
  • যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ দিচ্ছেন না তাদের সন্তান প্রসবের ৪ সপ্তাহ পরে খাবার বড়ি শুরু করতে হবে।

খাবার বড়ি যাদের জন্য উপযুক্ত নয়

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে প্রস্ত্ততকৃত খাবার বড়ি ব্যবহারে বিবেচ্য স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক উপযুক্ততার নির্দেশিকা অনুযায়ী সে সব স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক অবস্থায় খাবার বড়ি প্রদান করা যাবে না তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো

  • প্রসবের ৬ মাসের মধ্যে যদি শিশুকে বুকের দুধ পান করান।
  • ধুমপায়ী নারী যাদের বয়স ৩৫ বছর ও তদুর্ধে, ধুমপান বলতে বুঝায়ঃ সিগারেট, বিড়ি ও তামাক সেবন বা তামাক জাতীয় দ্রব্যাদি সেবন (যেমন তামাক পাতা, গুল, জর্দ্দা ইত্যাদি)।
  • হৃদযন্ত্র ও রক্ত সংবহননালীর রোগ-ব্যাধির একাধিক ঝুঁকি বিদ্যমান ( যেমন বেশি বয়স, ধুমপান তামাকপাতা/জর্দা সেবন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ মাত্রার চর্বি ইত্যাদি)।
  • উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস আছে (গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ সহ) কিন্তু রক্তচাপ মাপা সম্ভব নয় এমন পরিস্থিতিতে।
  • উচ্চ রক্তচাপ যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রিত কিন্তু বয়স ৩৫ বছর বা তদুর্ধে।
  • উচ্চ রক্তচাপঃ সিস্টলিক ১৪০ অথবা ডায়াস্টলিক ৯০ মিমি পারদ বা তার বেশি হলে।
  • সার্ভিক্স এর ক্যান্সার।
  • রোগ অনির্ণীত স্তনের পিন্ড বা চাঁকা।
  • স্তনের ক্যান্সারঃ বর্তমানে আছে বা অতীতে ছিল।
  • অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
  • ডায়াবেটিস সংশ্লিষ্ট জটিলতা (নেফরোপ্যাথি, রেটিনোপ্যাথি/নিউরোপ্যাথি, রক্ত সংবহননালীর অন্যান্য ব্যাধি, অথবা ২০ বছর ও তার বেশি সময় ধরে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত)।
  • যক্ষার ঔষধ রিফামপিসিন, মৃগী বা খিচুনীর ঔষধ ব্যবহার কালীন।

খাবার বড়ির ব্যবহার বিধি

বাংলাদেশে প্রায় সকল মিশ্র খাবার বড়ি প্যাকেটে ২১টি সাদা গর্ভনিরোধক বড়ি (যার প্রধান উপাদান হরমোন) এবং ৭টি খয়েরি বড়ি (আয়রন বড়ি) থাকে। কোন কোন প্যাকেটে বা পাতায় শুধু মাত্র ২১টি জন্মনিরোধক বড়ি থাকে।

  • প্রথমবার খাওয়ার বড়ি শুরু করার সময় মাসিকের প্রথম দিন। অর্থ্যাৎ মাসিকের প্রথম দিন হতে সাদা বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে। (তবে মাসিক শুরু প্রথম দিন হতে ৫ম দিন পর্যন্ত যে কোন দিন থেকেও শুরু করা যাবে)।
  • যে মহিলা গর্ভপাত বা এমআর করেছেন বা যে মহিলার গর্ভপাত হয়েছে, তিনি যদি খাবার বড়ি জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি হিসাবে পছন্দ করেন তবে গর্ভপাত /এম আর করার দিন থেকেই বা পরবর্তী ৫ম দিনের মধ্যে বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে।
  • সব সময় প্রথম বড়ি দিয়ে শুরু করতে হবে। বড়ির পাতার দিক নির্দেশনা (তীর চিহ্ন বা আঙ্গুল) অনুসরণ করে প্রথম বড়ি হতে ২১ দিনে ২১টি সাদা বড়ি খেতে হবে।
  • সাদা বড়ি শেষ হয়ে যাবার পর একইভাবে একটি করে ৭দিনে ৭টি খয়েরি বড়ি খেতে হবে। খয়েরী বড়ি খাওয়াকালীন সাধারণ মাসিক শুরু হয়। মাসিক আরম্ভ হলেও খয়েরী বড়ি খাওয়া বন্ধ করা যাবে না।
  • মাসিক হোক বা না হোক ৭টি খয়েরী বড়ি শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই উপরের নিয়ম অনুযায়ী নতুন একটি পাতা থেকে আবার সাদা বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে।
  • খাবার বড়ি পানি দিয়ে গিলে ফেলতে হয়। প্রতিদিন একই সময়ে বড়ি খাওয়ার অভ্যাস করা ভাল। বড়ি খাওয়ার সব চেয়ে ভাল সময় হচ্ছে রাতের খাবারের পরে বা শোবার আগে।
  • যে সব প্যাকেটে ২১টি বড়ি থাকে সেক্ষেত্রে ২১টি বড়ি শেষ হয়ে গেলে মাসিকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মাসিক শুরু হলে মাসিকের ১ম দিন থেকে আবার নতুন প্যাকেটের বড়ি খাওয়া শুরু করতে হবে। যদি মাসিক না হয় এবং গ্রহীতা নিশ্চিত থাকেন যে কোন বড়ি খেতে ভুল হয়নি তবে, শেষ বড়ি খাবার ৭দিন পরে আবার বড়ি খেতে শুরু করবেন।

খাবার বড়ি প্রথম শুরু করার নিয়ম

  • মাসিকের প্রথম দিন থেকে: ডিম্বস্ফুটন সঠিকভাবে প্রতিরোধ করার জন্য মাসিকের প্রথম দিন থেকেই খাবার বড়ি গ্রহণ শুরু করা উচিত। যদি মাসিক শুরু হতে কোন কারণে দেরী হয় অথবা অন্যান্য অস্বাভাবিক উপসর্গ থাকে তবে খাবার বড়ি গ্রহণ শুরু করার আগে মহিলা গর্ভবতী কিনা সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হবে।
  • যে কোন দিন থেকে: মহিলা যদি নিশ্চিত হন যে, তিনি গর্ভবতী নন তবে প্রয়োজনে যে কোন দিন থেকে মিশ্র বড়ি খাওয়া শুরু করতে পারেন। তবে পরবর্তী ৭ দিন তাকে কনডম ব্যবহার করতে হবে। এভাবে বড়ি খেতে শুরু করলে পরবর্তী মাসিকের সময় পিছিয়ে যাবে (যত দিন না বড়ি শেষ হয়)।

যদি বড়ি খাওয়া বাদ পড়ে তাহলে কি করণীয়

  • যদি ১ দিন বড়ি খেতে ভুলে যান তাহলে যখনই মনে পড়বে তখনই একটি বড়ি খাবেন এবং ঐ দিনের বড়িটি যথাসময়ে খাবেন।
  • যদি পর পর ২ দিন বড়ি খেতে ভুলে যান তাহরে মনে পড়ার সাথে সাথে ২টি বড়ি খাবেন এবং তার পরদিন নির্দিষ্ট সময়ে ২টি খাবেন। পাতার বাকি বড়ি নির্দিষ্ট সময়ে প্রতি দিন একটি করে খাবেন এবং পরবর্তী মাসিক না হওয়া পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করবেন বা স্বামীর সাথে সহবাসে বিরত থাকবেন।
  • যদি পর পর ৩দিন বড়ি খেতে ভুলে যান তবে ঐ পাতা থেকে বড়ি আর খাবেন না এবং পরবর্তী মাসিকের আগ পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করবেন বা সহবাস থেকে বিরত থাকবেন।

কনডম (Condom)

কনডম পুরুষদের জন্য একটি নিরাপদ এবং কার্যকর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। শুধুমাত্র জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসাবে নয়, কনডম যৌনবাহিত সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে পারে। কনডম বহু নামে এবং বিভিন্ন রং, আকার ও আকৃতিতে পাওয়া যায়। এর ব্যবহার অনাকাংখিত গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে এবং যৌনবাহিত রোগের বিস্তার রোধ করে। বাংলাদেশে গড়ে ৪.৫ % পুরুষ এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন।

কনডম কী?

কনডম রাবার বা ল্যাটেক্সের তৈরী একটি পাতলা আচ্ছাদন যা যৌনসঙ্গমের সময়ে পুরুষ ও নারীর যৌনাঙ্গের মধ্যে একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। গ্রহণযোগ্যতার জন্য কনডম খুবই পাতলাভাবে তৈরী হয়। এতে শুক্রনাশক ও পিচ্ছিলকারক পদার্থও এখন যোগ করা হচ্ছে। বর্তমানে কিছু কনডম ফোঁটাযুক্ত (dotted) হওয়াতে এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কনডম এখন আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যকর পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গর্ভ প্রতিরোধে কনডম কিভাবে কাজ করে

কনডম একটি প্রতি বন্ধক বস্ত্ত (Physical barrier) হিসাবে কাজ করে। বীর্যপাতের পর শুক্রকীট কনডমের ভিতরেই থেকে যায় ফলে কনডম শুক্রকীটকে যোনিপথে ঢুকতে বাঁধা দেয়। যার কারণে শুক্রানু ডিম্বানুর সাথে মিলতে পারে না, ফলে গর্ভসঞ্চার হয় না। কনডমের সঠিক ব্যবহার জন্মনিয়ন্ত্রণ ও যৌনবাহিত রোগের বিস্তার রোধ করে। তবে কনডমের ভূল ব্যবহার ও ফেটে গেলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা থাকে।

কনডমের কার্যকারীতা

সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে কনডম খুবই কার্যকর একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে ব্যর্থতার হার শতকরা মাত্র ২ ভাগ। যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা না হয়ে থাকে তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও যৌনরোগ (STDs) প্রতিরোধে কনডমের কার্যকারীতা অনেক হ্রাস পায়। কনডম সঠিক নিয়মে ব্যবহারের মাধ্যমে এইচআইভি/এইডস, গণোরিয়া, সিফিলিস, ক্ল্যামাইডিয়া, ট্রাইকোমোনিয়াসিস রোগ হতে নিশ্চিত রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও হারপিস, জেনিটাল ওয়ার্টস এবং অন্যান্য যৌন রোগ হতে কনডম সুরক্ষা দেয়।

কনডম ব্যবহারে সুবিধাসমূহ

  • কনডম শরীরের বাইরে প্রতিবন্ধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি কোন ঔষধ নয়, সুতরাং অন্যান্য ঔষধ/হরমোন নির্ভর পদ্ধতির মতো এর কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকর প্রভাব নেই।
  • সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে জন্মনিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এইচআইভি/এইডস ও অন্যান্য যৌনরোগ (STDs) হতে রক্ষা করে।
  • নিরাপদ, হরমোন জনিত কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার আশংকা নেই।
  • যৌনবাহিত রোগের কারণে মহিলাদের তলপেটে প্রদাহ, তলপেটে ব্যথা এবং মহিলা ও পুরুষ উভয়কে বন্ধ্যাত্ব হতে রক্ষা করে।
  • শুধুমাত্র যৌনমিলনের সময় ব্যবহার করতে হয়।
  • অনির্ধারিত যৌনমিলনের জন্য পূর্ব হতে সংরক্ষণ করা যায়।
  • সব পুরুষের জন্য উপযোগী।
  • গর্ভধারণের ভয় থাকে না বলে যৌনমিলনের আনন্দ বাড়ায়।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ ও যৌনরোগ প্রতিরোধে পুরুষের অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করে।
  • নববিবাহিত দম্পতিদের জন্য একটি উপযুক্ত পদ্ধতি।

কনডম ব্যবহারে অসুবিধাসমূহ

  • কারো কারো ল্যাটেক্স বা কনডমে ব্যবহৃত পিচ্ছিলকারী পদার্থ হতে এলার্জি হতে পারে।
  • অনুভূতি কমতে পারে, তাই কোন কোন দম্পতির যৌনমিলনে আনন্দ কমাতে পারে।
  • কখনও কখনও কনডম ছিড়ে যেতে পারে বা খুলে পড়ে যেতে পারে।

কনডম কারা ব্যবহার করবেন না

শুধুমাত্র যাদের কনডমে এলার্জি আছে তারা ব্যতীত সকলেই কনডম ব্যবহার করতে পারেন। শুধুমাত্র এলার্জি না থাকলে নিরাপদে ও কার্যকরভাবে কনডম ব্যবহার করা যায়। ল্যাটেক্সে এলার্জির কিছু লক্ষণঃ পুরুষাঙ্গ লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া বা চুলকানী।

কনডম কারা ব্যবহার করবেন

  • যে কোন প্রজনন সক্ষম পুরুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ ও যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণ রোধের জন্য কনডম ব্যবহার করতে পারে। (দ্বৈত নিরাপত্তা)
  • যেসব দম্পতি কোন শারীরিক কারণে জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যান্য পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন না তারা অনায়াসে কনডম ব্যবহার করতে পারেন।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য যে সকল দম্পত্তি স্থায়ী অথবা এক নাগাড়ে কোন পদ্ধতি গ্রহণ করতে চান না, তারা কনডম ব্যবহার করতে পারে। স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে যদি কারো বা উভয়ের যৌনবাহিত রোগ থাকে তবে তাদের একজনের থেকে অন্যজনের মধ্যে রোগ বিস্তার রোধে কনডম অত্যন্ত উপযোগী।
  • সন্তান প্রসবের পর প্রথম ৬ মাস স্তন্যদানকালে কার্যকর গর্ভনিরোধের জন্য কনডম ব্যবহার করতে পারেন।
  • ভাসেকটমি গ্রহণ করার পর স্ত্রী যদি কোন পদ্ধতি গ্রহণ না করে সেক্ষেত্রে স্বামীকে ৩ মাস পর্যন্ত কনডম ব্যবহার করতে হবে।
  • নবদম্পতিদের সঠিক পদ্ধতিতে কনডম ব্যবহাররের জন্য উৎসাহিত করা উচিত।

কনডমের ব্যবহারবিধি

  • কনডম কেনার সময়ে/ব্যবহারের পূর্বে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ও ল্যামিনেশন/প্যাকেট অক্ষত আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।
  • সহবাসের আগে কনডম প্যাকেট থেকে খুলে উত্থিত পুরুষাঙ্গে পরে নিতে হবে।
  • কনডম পরার সময় সামনের অংশ টিপে ধরে নিতে হবে যেন, উত্থিত অঙ্গে পরার পর সামনে ১.৫ সেন্টিমিটার অতিরিক্ত জায়গা বীর্য ধারণের জন্য থাকে এবং সেখানে কোন বাতাস না থাকে। বাতাস থাকলে কনডম ফেটে যেতে পারে।
  • বীর্যপাত হওয়ার পরপরই উত্থিত থাকা অবস্থায় কনডমের গোড়া চেপে ধরে যোনিপথ থেকে পুরুষাঙ্গ বের করতে হয়। এই সতর্কতার উদ্দেশ্যে হলো যাতে করে কোনো বীর্য যোনিপথে ঢুকে যেতে না পারে।
  • সর্তকতার সাথে কনডম পুরুষাঙ্গ থেকে খুলতে হবে যাতে করে কোনে শুক্রাণু যোনিপথে ঢুকতে না পারে।
  • কনডম কাগজে মুড়িয়ে বা প্যাকেটে জড়িয়ে ডাষ্টবিনে ফেলতে হবে অথবা সম্ভব হলে মাটিতে পুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ব্যবহারের পর এমন স্থানে ফেলতে হবে বা বিনষ্ট করতে হবে যাতে অস্বস্তি বা লজ্জাকর অবস্থার সৃষ্টি না হয়।

কনডম কিভাবে সংরক্ষণ করবেন

  • কনডম অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা স্থানে রাখা যাবে না, তাতে গলে বা ফেটে যেতে পারে। অনেকেই টিনের বেড়ায় বা চালে কনডম গুজে রাখেন, যার ফলে কনডম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে যাতে অপব্যবহার না হয়।

গর্ভ নিরোধক ইনজেকশন (Injectables)

গর্ভ নিরোধক ইনজেকশন মহিলাদের জন্য একটি নিরাপদ ও কার্যকর গর্ভনিরোধক অস্থায়ী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি। বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচীতে শুধুমাত্র প্রজেস্ট্রেরন সমৃদ্ধ গর্ভ নিরোধক ইনজেকশন প্রচলিত আছে। বাংলাদেশে গড়ে ১০ % মহিলা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন।

গর্ভনিরোধক ইনজেকশন কী ?

গর্ভনিরোধক ইনজেকশন মহিলাদের জন্য অস্থায়ী ও স্বল্পমেয়াদী পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি। যা তিনমাস অন্তর অন্তর গভীর মাংসপেশীতে নিতে হয়।

 কার্যকারিতা

১৫০ মিলিগ্রাম একটি ইনজেকশন প্রতি ৩ মাস পর পর দেখা গেছে প্রতি ১০০ জন মহিলার ক্ষেত্রে বছরে পদ্ধতি ব্যর্থতার হার শতকরা ০.৩ জনেরও কম।

ইনজেকশন ব্যবহারে সুবিধা

  • অত্যন্ত কার্যকরী (প্রায় ১০০ ভাগ) এবং নিরাপদ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।
  • গোপনীয়তা রক্ষা করে নেওয়া যায়।
  • প্রতিদিন খাওয়ার বা ব্যবহার করার ঝামেলা থাকে না। একটি ইনজেকশন কমপক্ষে ৩ মাস পর্যন্ত গর্ভসঞ্চারে বাঁধা দান করে।
  • অস্থায়ী পদ্ধতি কাজেই পদ্ধতি ছেড়ে দিলে পুনরায় সন্তান ধারণ করা সম্ভব।
  • ইনজেকশন বুকের দুধের পরিমান গুণগত মানের উপর কোন প্রভাব নেই ফলে বাচ্চা জন্মদানের ৬ সপ্তাহ পরেই এটি ব্যবহার করা যায়।
  • জরায়ুর বাহিরে গর্ভসঞ্চারের (একটোপিক প্রেগন্যান্সি) ঝুঁকি কমায়।
  • যে কোন বয়সের প্রজনন সক্ষম মহিলা এই ইনজেকশন দিতে পারেন।
  • এই ইনজেকশন জরায়ুতে টিউমার প্রতিরোধে সহায়তা দান করে।
  • এই ইনজেকশন ডিম্বাশয়ের (Ovary) ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ইনজেকশন ব্যবহারে অসুবিধা

  • গর্ভনিরোধক ইনজেকশন গ্রহীতাদের প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই নিম্নলিখিত কোন না কোন ধরণের মাসিকের পরিবর্তন ঘটে, যেমনঃ
  • ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব বা অনিয়মিত রক্তস্রাব। এটিই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়।
  • দীর্ঘদিন মাসিক বন্ধ থাকতে পারে। সাধারণত একটানা ১ বছর ব্যবহার করার পর কারো কারো মাসিক দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
  • ওজন বৃদ্ধি পাওয়া।
  • ইনজেকশন নেয়া বন্ধ করার পর পুনরায় সন্তান ধারণ করতে সাধারণতঃ ৬-১২ মাস সময় লাগতে পারে।
  • কোন কোন গ্রহীতার মাথা ধরে, সতন ভারী এবং ব্যথা অনুভূত হয়, মেজাজ খিটখিটে হয় এবং মাথা ঝিম ঝিম করে।

ইনজেকশন যাদের জন্য উপযুক্ত

  • কমপক্ষে একটি জীবিত সন্তান থাকতে হবে।
  • কমবয়সী বা স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণের পূর্বে পরবর্তী সন্তান জন্মদান বিলম্বিত করার জন্য এ পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য হতে পারে। অথবা যাদের দুই বা তার বেশী সন্তান আছে কিন্তু স্থায়ী পদ্ধতি নিতে আগ্রহী নন।
  • যারা বারবার খাবার বড়ি খেতে ভুলে যান অথবা বড়ি ব্যবহারে অসুবিধা হয় বা বড়ি ব্যবহার নিষিদ্ধ।
  • বাচ্চাদের বুকের দুধ খাওয়ানো অবস্থায় গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করতে চাইলে।

যাদের ইনজেশন দেয়া যাবে না

সামাজিক কারণ
  • সন্তান হয়নি (Nulliparous) বা বর্তমানে কোনো জীবিত সন্তান নাই/সদ্য বিবাহিত
  • অবিবাহিত/বিধবা/তালাকপ্রাপ্ত/স্বামী থেকে পৃথক
স্বাস্থ্যগত কারণ
  • হৃদযন্ত্র ও রক্ত সংবহন নালীর রোগ-ব্যাধির একাধিক ঝুঁকি বিদ্যমান (যেমন বেশি বয়স, ধূমপান, তামাক-পাতা/জর্দা সেবন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে উচ্চ মাত্রার চর্বি ইত্যাদি)
  • উচ্চ রক্তচাপঃ সিস্টলিক ১৪০ মিমি পারদ বা তদুর্ধে, অথবা ডায়াস্টলিক ৯০ মিমি পারদ বা তদুর্ধে এবং রক্তসংবহন নালীর ব্যাধি বিদ্যমান থাকলে।
  • রক্তস্রাব অনিয়মিত, অত্যধিক বা দীর্ঘায়িত হলে
  • যোনিপথে রক্তস্রাব, যার কারণ জানা নাই
  • সার্ভিক্স ও স্তনের ক্যান্সার বিদ্যমান থাকলে।
  • রোগ অনির্ণীত স্তনের পিন্ড বা চাঁকা বিদ্যমান থাকলে।

ইনজেকশন দেওয়ার উপযুক্ত সময়/প্রয়োগবিধি

মাসিকের পর
  • প্রথম ডোজ মাসিক শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে ৭ দিনের মধ্যে।
  • পরবর্তী ডোজ প্রথমবার দেয়ার পরে পরবর্তী ডোজসমূহ তিন মাস পর পর দিতে হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে (যেমনঃ রমজান, বন্যা, বিদেশ ভ্রমন, স্থান পরিবর্তন) নির্বাচিত তারিখের ১৪ দিন আগে অথবা ৩০ দিন পরেও দেয়া যেতে পারে।
পরবর্তী ডোজের জন্য গ্রহীতার জন্য পরামর্শ

ইনজেকশন ৩ মাস পর পর   নিতে হবে (১ম ডোজ ক্লিনিকে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার দ্বারা)। যদি কোন কারণে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ইনজেকশন না নিতে পারে তাহলে যৌন সঙ্গম থেকে বিরত থাকতে হবে বা কনডম ব্যবহার করতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্থানীয় পরিবার কল্যাণ সহকারীর সঙ্গে বা ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে হবে। পরিবার কল্যাণ সহকারীগণ ইনজেকশন এর ২য় ও তৎপরবর্তী ডোজসমূহ দিয়ে থাকেন।

ইনজেকশনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াসমূহ

  • মাসিকের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বন্ধ থাকা
  • ছোট-খাট সমস্যা যেমন-ওজন বেড়ে যাওয়া, তলপেট ভারী ভারী লাগা, পেট ব্যাথা, মাথা ধরা, মানসিক দুঃশ্চিন্তা
  • অনিয়মিত বা ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব হওয়া
  • অতিরিক্ত অথবা দীর্ঘস্থায়ী রক্তস্রাব হওয়া

আই ইউ ডি (IUD)

আইইউডি মহিলাদের জরায়ুতে স্থাপন উপযোগী একটি দীর্ঘ মেয়াদী অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি বাংলাদেশে সরকারী কার্যক্রমে ব্যবহৃত আইইউডি’র নাম কপার-টি ৩৮০-এ। সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে এটি অত্যন্ত কার্যকর (৯৯.৯৯%)।

আই ইউ ডি/কপার-টি কী?

ইংরেজি T অক্ষরের মত দেখতে এ পদ্ধতি পলিইথিলিন এর তৈরী, এর দন্ডে এবং দুই বাহুতে তামার সূক্ষ্ম তার জড়ানো থাকে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্যারামেডিক দ্বারা মেয়েদের জরায়ুতে ইহা পরানো হয়।

আইইউডি’র সুবিধা

  • খুবই কার্যকরী ( ৯৯.৯%)
  • দীর্ঘমেয়াদী (১০ বৎসর)
  • সহজে প্রয়োগ করা যায়
  • প্রয়োগ করার সাথে সাথেই কার্যকর হয়
  • ব্যবহারে বুকের দুধের কোন তারতম্য হয় না
  • পদ্ধতি ছেড়ে দেয়ার সাথে সাথেই গর্ভধারণ ক্ষমতা ফিরে আসে
  • যৌন সঙ্গমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না

আইইউডি’র অসুবিধা

  • কোন কোন গ্রহীতার   প্রথম কয়েক মাস তল পেটে ব্যথা হতে পারে
  • কোন কোন গ্রহীতার   প্রথম কয়েক মাস মাসিকের সময় রক্তস্রাব বেশী হতে পারে

আইইউডি কার জন্য উপযোগী

  • যে সব মহিলার অন্তত একটি জীবিত সন্তান আছে এবং দীর্ঘ দিনের জন্য গর্ভরোধ করতে চান
  • যে সব মহিলা হরমোন সমৃদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারে না

আইইউডি প্রয়োগের সময়

  • মাসিক চক্রের ১-৭ দিনের মধ্যে আইইউডি পরানো উত্তম।

আইইউডি প্রদানে স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক উপযুক্ততা

নিম্নলিখিত কারণে আই ইউডি পরানো যাবে না

  • যদি কোন জীবিত সন্তান না থাকে
  • প্রসবের চার সপ্তাহের মধ্যে
  • প্রসবোত্তর সংক্রমন ও সংক্রমিত গর্ভপাতের পর
  • অতিরিক্ত রক্ত স্রাব যার কারণ জানা নাই

ইমপ্ল্যান্ট (Implant)

ইমপ্ল্যান্ট একটি দীর্ঘ মেয়াদী, শুধুমাত্র প্রজেষ্টোজেন হরমোন সমৃদ্ধ কার্যকর গর্ভনিরোধক যা মহিলাদের বাহুতে চামড়ার নিচে স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ইমপ্ল্যানন (এক রড বিশিষ্ট) তিন বছর মেয়াদী ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহার করা হয় এবং পাঁচ বছর মেয়াদী দুই রড বিশিষ্ট ইমপ্ল্যান্ট কর্মসূচীতে অন্তর্ভূক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

ইমপ্ল্যান্ট কী?

ইমপ্ল্যান্ট ১/২ রড বিশিষ্ট ছোট ছোট নরম চিকন ক্যাপসুল যা একজন মহিলার বাহুর ভিতরের দিকে ত্বকের নীচে স্থাপন করা হয়।

কার্যকারিতা

ইমপ্ল্যান্ট ব্যবহারকালীন প্রথম বছর প্রতি ১০০০ জনে ১ জন মহিলা গর্ভধারনের ইতিহাস পাওয়া যায়।

ইমপ্ল্যান্টের সুবিধা

  • অত্যন্ত কার্যকরী, অস্থায়ী দীর্ঘমেয়াদী পদ্ধতি যা একটানা ৩-৫ বছর পর্যন্ত গর্ভধারণ প্রতিরোধ করতে পারে
  • স্থাপনের ২৪ ঘন্টা পরই গর্ভনিরোধ কার্যকারিতা শুরু হয়ে যায়
  • খুলে ফেলার পর পরই পুণরায় গর্ভধারণ ক্ষমতা ফিরে আসে
  • মায়ের বুকের দুধের গুনগত বা পরিমানগত কোন তারতম্যের সৃষ্টি করে না বিধায় শিশু জন্মের ৬ সপ্তাহের পর পরই ইমপ্ল্যান্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন
  • প্রয়োজনে যে কোন সময়ে খোলার সুবিধাঃ যদি কোন কারণে গ্রহীতা ইমপ্ল্যান্ট আর ব্যবহার করতে না চান বা সন্তান নিতে চান তবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ডাক্তার দিয়ে এটা খুলে নিতে পারেন।

ইমপ্ল্যান্টের অসুবিধা

  • দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তস্রাব
  • বেশিদিন ধরে অল্প অল্প রক্তক্ষরণ অথবা অতিরিক্ত রক্তস্রাব। এ সমস্যাটির হার খুবই কম এবং সাধারণত প্রথম কয়েক মাস পরে সমস্যা এমনিতেই ভাল হয়ে যায়
  • মাসিক বন্ধ থাকা (কিছু কিছু মহিলা এটিকে সুবিধা হিসেবে গণ্য করে)
  • মাথা ধরা, বমি বমি ভাব, ওজন বৃদ্ধি

ইমপ্ল্যান্টের জন্য উপযুক্ত গ্রহীতা

  • বিবাহিত
  • দীর্ঘদিনের জন্য জন্মবিরতি চান
  • ইস্ট্রোজেন জাতীয় গর্ভনিরোধক ব্যবহার করতে পারেন না
  • প্রসবোত্তর বুকের দুধ খাওয়ান যে সমস্ত মা
  • গর্ভপাতের পর বা এমআর করার পর

ইমপ্ল্যান্ট স্থাপনের উপযুক্ত সময়

  • মাসিক চলাকালীন প্রথম ৭ দিনের মধ্যে
  • যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে গ্রহীতা গর্ভধারণ করেননি তবে মাসিক চক্রের যে কোন সময়ে
  • যদি গ্রহীতা পূর্ব হতে কোন আধুনিক গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন

মহিলাদের স্থায়ী পদ্ধতি

টিউবেকটমি (Tubectomy)/লাইগেশন

যেসব মহিলার কমপক্ষে দুটি জীবিত সন্তান রয়েছে ও ছোট সন্তানের বয়স কমপক্ষে ১ বছর হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবে আর কোন সন্তান নিতে চান না তাদের জন্য টিউবেকটমি একটি নিরাপদ ও কার্যকরী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।

টিউবেকটমি অপারেশন দুই পদ্ধতিতে করা হয়

১. মিনিল্যাপ টিউবেকটমি (Minilap Tubectomy): এ পদ্ধতিতে মহিলাদের তলপেটের নিম্নাংশে মিনিল্যাপারটমির (সামান্য কেটে) মাধ্যমে পেটের ভিতরে আংগুল ঢুকিয়ে ডিম্ববাহী নালী উপরে তুলে আনতে হয় এবং ডিম্ববাহী নালীর কিছু অংশ বেধে কেটে ফেলে দেওয়া হয়, ফলে নালীপথের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে টিউবেকটমি করা হয় এবং ব্যর্থতার হার খুবই কম।

২. ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে টিউবেকটমি (Laparoscopic Tubectomy): ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে ডিম্ববাহী নালীতে স্প্রিং-ক্লিপ বা ফেলপ-রিং আটকিয়ে দিয়ে ডিম্ববাহী নালী পথকে বন্ধ করে দেয়া হয়, ফলে নালীপথের ধারাবাহিকতা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশে এই পদ্ধতিতে কোথাও কোথাও টিউবেকটমি করা হয়।

টিউবেকটমি অপারেশনের সুবিধা

  • অপারেশনের সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকরী হয় এবং খুবই নিরাপদ
  • যৌন ক্ষমতা ও শারীরিক শক্তি কমে না
  • গর্ভবতী হওয়ার চিন্তা না থাকায় যৌন মিলনের ইচ্ছা, ক্ষমতা ও তৃপ্তি বেড়ে যেতে পারে
  • দীর্ঘমেয়াদী কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই
  • অত্যন্ত সহজ ও নিরাপদ অপারেশন। পুরাপুরি অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না। অপারেশনের স্থানটুকু অবশ করে নেওয়া হয় এবং ব্যথা নাশক ইনজেকশন দেওয়া হয়, ফলে ব্যথা পাওয়া যায় না।
  • অপারেশনের দিনই বাড়ী ফিরে যাওয়া যায়

টিউবেকটমি অপারেশনের অসুবিধা

  • স্থায়ী পদ্ধতি বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন আছে;
  • এটি একটি ছোট অপারেশন হলেও ঝুঁকির সম্ভবনা আছে;
  • অপারেশনের পর কয়েক দিন ব্যথা থাকতে পারে;
  • অপারেশন পরবর্তীকালে গ্রহীতা সন্তান চাইতে পারেন, এ ক্ষেত্রে পুনসংযোজন অপারেশনের প্রয়োজন হয়।

পুরুষদের স্থায়ী পদ্ধতি

ভ্যাসেকটমি/এনএসভি (NSV)

যেসব পুরুষের কমপক্ষে দুটি জীবিত সন্তান রয়েছে ও ছোট সন্তানের বয়স কমপক্ষে ১ বছর হয়েছে এবং ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবে আর কোন সন্তান নিতে চান না তাদের জন্য ভ্যাসেকটমি/এনএসভি একটি নিরাপদ ও কার্যকরী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।

ভ্যাসেকটমি/এনএসভি অপারেশন কিভাবে করা হয়

এ পদ্ধতিতে ছুরি বা সার্জিকেল ব্লেডের প্রয়োজন হয় না। সার্জিকেল ব্লেডের পরিবর্তে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত সরু ও ধারালো ফরসেপের সাহায্যে অন্ডথলির মাঝ রেখা বরাবর মাত্র একটি ছিদ্রকরে উভয় পার্শ্বের শুক্রবাহী নালী বের করে এনে বেঁধে কেটে দেয়া হয়। ফলে কোন সেলাই লাগে না এবং রক্তপাতও হয় না। বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে এনএসভি পদ্ধতিতে ভ্যাসেকটমি করা হয়।

ভ্যাসেকটমি/এনএসভি অপারেশনের সুবিধা

  • স্থায়ী পদ্ধতি অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকরী।
  • এই অপারেশনে কোন প্রকার কাটা-ছেড়ার প্রয়োজন হয় না
  • যৌন ক্ষমতা ও শারীরিক শক্তি কমে না এবং সহবাসে কোন সমস্যা হয় না।
  • স্ত্রী গর্ভসঞ্চার হওয়ার চিন্তা না থাকায় যৌন মিলনের ইচ্ছা, ক্ষমতা ও তৃপ্তি বেড়ে যেতে পারে।
  • দীর্ঘমেয়াদী কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বা স্বাস্থ্য হানির ঝুঁকি নেই।
  • অত্যন্ত সহজ ও নিরাপদ অপারেশন। অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না। অপারেশনের স্থানটুকু অবশ করে নেওয়া হয়, ফলে ব্যথা পাওয়া যায় না;
  • অপারেশনের পরে ২০-৩০ মিনিটের মধ্যে বাড়ী ফিরে যাওয়া যায়।

ভ্যাসেকটমি/এনএসভি অপারেশনের অসুবিধা

  • স্থায়ী পদ্ধতি বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে চিন্তা ভাবনার প্রয়োজন আছে;
  • এটি একটি ছোট অপারেশন হলেও কিছুটা ঝুঁকির সম্ভবনা আছে;
  • সঙ্গে সঙ্গে কার্যকরী হয় না। কার্যকরী হতে কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগে। অপারেশনের পর ঐ তিন মাস গ্রহীতাকে কনডম ব্যবহার করতে হয় বা স্ত্রীকে অন্য কোন কার্যকর পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়;
  • অপারেশন পরবর্তীকালে গ্রহীতা সন্তান চাইতে পারেন, এ ক্ষেত্রে পুনসংযোজন অপারেশনের প্রয়োজন হয়।