মেনোপজ

শেয়ার করুন

সুচিপত্র

মেনোপজ কোন অসুখ নয় বরং এটি একটি স্বাভাবিক শারীরিক প্রক্রিয়া। শারীরিক অসুস্থতা না হলেও যদি এর উপসর্গগুলো মারাত্মক আকার ধারণ করে তাহলে অবশ্যই এর চিকিৎসা করাতে হবে।

মেনোপজ কী

সাধারণত শেষ মাসিক আবর্তনের ১২ মাস পরের সময়কেই মেনোপজ বলে। এর ফলে মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং গর্ভবতীও হওয়া যায় না। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মেনোপজের বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়। এর ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, শক্তির ক্ষয় হয় এবং মানসিক অবসাদ দেখা দেয়।

মেনোপজের ধাপ

মেনোপজের দুইটি ধাপ আছে। যেমন :

  • পেরিমেনোপজ (Perimenopause) : এক্ষেত্রে মাসিক চলতে থাকে তবে এর সাথে মেনোপজের উপসর্গও দেখা দেয়। হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে উঠা-নামা করে। এছাড়া অতিরিক্ত গরম লাগা (Hot flash) ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা যায়। Perimenopause ৪-৫ বছর বা এর বেশি সময় স্থায়ী হয়। এসময় গর্ভবতী হওয়ার সম্ভবনা থাকলেও তা খুব বেশি দেখা যায় না।
  • পোস্টমেনোপজ (Postmenopause) : শেষ মাসিক হবার ১২ মাস পর পোস্ট মেনোপজ হতে দেখা যায়। এসময় ডিম্বাশয় (Ovary) থেকে খুব কম ইস্ট্রোজেন (Estrogen) এবং প্রোজেস্টেরন (Progestarone) উৎপাদিত হয়।

মেনোপজের লক্ষণ ও উপসর্গ

মাসিক শেষ হবার এক বছর হওয়ার দীর্ঘ সময় পর সাধারণত মেনোপজের লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন:

  • অনিয়মিত মাসিক
  • অনুর্বরতা (Decreased fertility)
  • যোনিপথ শুষ্ক থাকা
  • অতিরিক্ত গরম লাগা (Hot flash)
  • অনিদ্রা বা ঘুমে ব্যাঘাত
  • মেজাজ উঠা-নামা করা (Mood swings)
  • মেদ বৃদ্ধি পাওয়া
  • চুল পাতলা হয়ে যাওয়া
  • স্তন ছোট হয়ে যাওয়া

কখন ডাক্তার দেখাবেন

মেনোপজ সংক্রান্ত বিষয়ে যখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে:

  • মেনোপজ হতে পারে এমন সময়ে (পেরিমেনোপজ) এবং মেনোপজের পরবর্তী সময়গুলোতে (পোস্টমেনোপজ) নিবৃত্তিমূলক শারীরিক যত্ন এবং বয়সজনিত স্বাস্থ্যের যত্নের জন্য
  • মেনোপজ শুরু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত না হলে এবং তার আগের মাসে মাসিক বন্ধ থাকলে
  • মেনোপজ চলা অবস্থায় যোনিপথে রক্ত গেলে

কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে

  • রক্তের পরীক্ষা। রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের হরমোনের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

কি ধরণের চিকিৎসা আছে

মেনোপজের জন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ ও নির্দেশনা অনুযায়ী নিচের চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে :

  • হরমোন চিকিৎসা (Hormone therapy)
  • স্বল্পমাত্রার বিষাদ প্রতিরোধক (Antidepressants) ওষুধ সেবন

জীবনযাপন পদ্ধতি

  • নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং অতিরিক্ত গরম যাতে না লাগে এমন কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকা
  • বিশ্রাম বা আরাম করা । এক্ষেত্রে দীর্ঘশ্বাস নেয়া, মাংসপেশি শিথিল করা বেশ ফলদায়ক
  • তলপেট ও শ্রোণীদ্বার এর মাংসপেশির ব্যায়াম করা
  • শাকসবজি, ফলমূল সমৃদ্ধ সুসম খাদ্য গ্রহণ ও প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা
  • ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
  • ধূমপান করা থেকে বিরত থাকা
  • নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া

মেনোপজের ফলে কী ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে?

মেনোপজের ফলে নিচের জটিলতাগুলো দেখা দিতে পারে :

  • হৃদযন্ত্র ও রক্ত সংবহনতন্ত্রের রোগ (Cardiovascular Disease) হয়
  • শরীরের হাড় ভঙ্গুর ও দুর্বল হয়ে যায় (Osteoporosis)
  • মূত্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে অসামর্থ্যতা (Urinary incontinence) দেখা দেয়
  • ওজন বৃদ্ধি পায়

মেনোপজ হওয়ার কারণগুলো কী কী ?

মেনোপজ হওয়ার কারণগুলো হল :

  • মাসিক প্রাকৃতিকভাবে যখন বন্ধ হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই ডিম্বাশয় (Ovaries)  কম হরমোন ( Estrogen এবং Progesterone) তৈরি করে। প্রাকৃতিকভাবে প্রজনন হরমোন (reproductive hormones) গুলোর  হ্রাসের (decline) কারণে মেনোপজ হয়।
  • অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু এবং ডিম্বাশয় অপসারণের ফলে মেনোপজ হয়ে থাকে।
  • ক্যান্সারের চিকিৎসা যেমন- কেমোথেরাপি এবং রেডিয়েশন থেরাপি করালে মেনোপজ হতে পারে।‌‌‌‌
  • ৪০ বছর বয়সের আগে অনেক সময় ডিম্বাশয় (ওভারি) থেকে স্বাভাবিকমাত্রার জনন হরমোন (reproductive hormones) উৎপন্ন না হলে মেনোপজ হতে পারে।

রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোন সর্ম্পকে কোন বিষয়গুলো জানা যায়?

রক্তের পরীক্ষার মাধ্যমে হরমোন সর্ম্পকে যে বিষয়গুলো জানা যায় সেগুলো হলো:

  • ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের পরিমাণ (Follicle-Stimulating Hormone (FSH)
  • ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ (Estrogen)
  • থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোনের পরিমাণ (Thyroid-Stimulating Hormone)